Header Ads

Header ADS

'বকুল ফুল' বইয়ের প্রতি লেখকের অনুভূতি ভালবাসা মিশেল এক অপূর্ব চিঠিতে


প্রত্যেক লেখকের কাছেই তাঁর সৃষ্টি, তার লেখা তার সন্তানের মতো। দিনের পর দিন,  রাতের পর রাত, কখনো অর্ধাহারে, কখনোবা অনাহারে থেকে থেকে লেখক তার মস্তিষ্ক থেকে হাজারো শব্দ বের করে আনেন। কলমের খোঁচায় শব্দগুলো জোড়া লেগে লেগে এক সময় মালা হয়ে উঠে, শব্দমালা। সেসব শব্দমালারা মিলে এক সময় তৈরি হয় আস্ত একটা বই।

সেই বইয়ে কি থাকে?

জীবনের গল্প থাকে, গল্পের জীবন থাকে। লেখক তার বইয়ে মাথার ঘাম পায়ের ঘাম এক করে গল্পের জীবন আঁকেন, জীবনের গল্প আঁকেন। কখনো সেই আঁকা হয় দক্ষ শিল্পীর মতো সুনিপুণ কর্ম , কখনোবা কাঁচা।

কাঁচা হোক কিংবা পাকা হোক স্রষ্টা মাত্রই তার সৃষ্টিকে ভালবাসেন। মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসেন।  সন্তানের মতোই আপন করে ভালবাসেন।

জানতাম না একজন লেখকের কতটুকু ভালবাসা মেশানো থাকে, কতটুকু দরদ, কতটুকু মায়া মমতা মিশে থাকে তার বইয়ের প্রতি।

কিছুটা আঁচ করা যায়, মনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়ের লেখা তার বই 'বকুল ফুল'র প্রতি একখানা চিঠি পড়ে। সবাইকে অনুরোধ করব চিঠিটা পড়ুন। পড়ার পর বকুল ফুলের প্রতি আপনি একটু হলেও আকৃষ্ট হবেন


প্রিয় বকুল ফুল,

ভালোবাসা জেনো। কতদিন আমি হাত গুটিয়ে বসে আছি তোমার জন্য। কতজন আমাকে বলে মনোয়ার ভাই, লেখালেখি কি ছেড়ে দিলেন? এক বকুলের জন্য আপনি আটকে গেলেন। আমি তখন কি বলি জানো! বলি, আমি কাঁচা লেখক, আমি আমার অগ্রজদের পথ এখনি অনুসরণ করতে পারি না। কারণ, অগ্রজ লেখকেরা অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে করে একটা জায়গা তৈরি করে লেখালেখি করেন, তারা এক সাথে অনেক কিছু লিখতে পারেন। আমি পারি না, এ আমার ব্যর্থতা গো বকুল। আমার নিজেকে সময় দেবার ব্যাপার আছে, তোমাকে নিয়ে ভাববার বিষয় আছে।

তুমি বলো, তোমাকে আমার কত, কত, কতবার পড়তে হয়েছে। বার বার তোমাকে ফেলে রেখেছি, টানা লিখে যাইনি। দশদিন লিখে সেই লেখা কুড়ি দিন লাগিয়ে পড়েছি। পড়ার পর দেখি কতশত ভুল আমার চোখের সামনে তারার ফুল হয়ে ফুটছে। আমি দিশেহারা হয়ে যাই, শান্ত মাথায় সজীব আঙুলে পরম মমতায় তোমাকে লিখি। আমি খুব মিস করি, খুব মিস করি সেই ভালোবাসার এগারোটি মাস, যেখানে তুমি আমাকে তোমার বুকে পিন দিয়ে আটকে রেখেছিলে। বারংবার তোমাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছ, নিজেকে বার বার পড়িয়ে নিয়েছ।
বকুল ফুল, তোমার চরিত্ররা অন্য কাউকে মুগ্ধ করার আগে তুমি আমাকে মুগ্ধ করেছ। স্মিতার প্রেমে পরে গিয়েছি সেই প্রথম রাতেই, যখন সে মাথার উপরে ছাতা ধরে বলে, ভিজে যাচ্ছিলেন এগিয়ে দিয়ে গেলাম, কিন্তু তাকে আমার বড্ড ভয় হয়। নীলাসাগর গ্রামে যখন ট্রেনের কামড়া বিচ্ছিন্ন হয়- তখন সে কিভাবে শান্ত মুখে বলল, 'মশাই! ও কিছু না। ট্রেন ছিঁড়ে গেছে।

অনেকদিন পরে, আজ মনা পাগলাকে মনে পড়লো, আচ্ছা সে এমন কেন করলো? ছলিমের মেয়েটার কি হয়েছিলো! আশ্চর্য লাগে ওই গ্রামের কিশোরী মেয়েরা হয়ে যায় নিখোঁজ, যুবকদের মৃত্যু হয় অপঘাতে
সত্যি বলছি বকুল ফুল, তোমাকে লিখতে গিয়ে আমি প্রায় রাতেই ভয়ে আর লিখতে পারিনি, দরজা- জানালা বার বার চেক করেছি। আপু, একদিন বলল, কিরে! দরজা ধরে টানিস কেন? আমি বললাম, দরজা ঠিকভাবে দেওয়া কিনা চেক করছি। প্রায় রাতেই এসব করতাম। দরজার সামনে গিয়ে টানাটানি, এসব টানাটানি কখনো দীর্ঘ হয়ে যেত, বিরক্ত হয়ে বিছানায় ফিরতাম, কিন্তু উঠে গিয়ে আবার চেক করতাম।মাঝে মাঝে খুব থ্রিল পেতাম, দুইশত বছরের ইতিহাস, আর ঐ ব্যবসায়ী নারী। আহা, এসবই আমাকে বারবার লিখেয়েছে, পড়িয়েছে।

বকুল, তুমি ভালো থেকো। আমি নিশ্চিত, আমার ভালোবাসা, ভালোলাগা, মুগ্ধতা অনেক কিছুই তুমি পাঠকদের কাছে পাবে। তুমি আমার খুব পরিশ্রমের লেখা। এগারো মাস তোমাকে দিয়েছি, কত দীর্ঘ সময় বল!আরেকদিন লিখব, জানি না কবে। ভালোবাসি বকুল ফুল।

ইতি,
তোমার লেখক



উপরের ছবিতে কাগজের টুকরো গুলো দেখেছেন?

এই কাগজের টুকরোগুলো সাধারণ কোন কিছু নয়।

জমে থাকা ছেঁড়া  এই কাগজের টুকরো থেকেই জন্ম নেয় একটি স্বপ্ন যে স্বপ্নের  নাম আজ 'বকুল ফুল'। এই কাগজগুলো সম্পর্কে লেখক মনোয়ারুল ইসলাম ভাইয়ের কাছ থেকেই শুনুন।

"এই কুটিকুটি করে ছেড়া নোংরা কাগজগুলো কিন্তু সাধারণ কিছু না, বরং একটা স্বপ্নের মাধ্যম!

ছেড়া টুকরো গুলোতে আমাদের দুই কন্যার মুখের লালা মেশানো আছে, তাদের হাতের ময়লা জড়িয়ে আছে, তাদের দুই বোনের খুশি মেশানো আছে।

আমি বকুল ফুল লিখেছিলাম ল্যাপটপে, কিন্তু একদিন ল্যাপটপ কাজ করতে চায়লো না, মাথায় তখন লেখা গতি পেয়েছে- লিখলাম প্যাডে, লিখে গিয়েছিলাম ঢাকা, একসপ্তাহ পরে ফিরে এসে দেখি, আমার লেখা প্যাডটি বিছানার নিচে, সাথে কাগজের টুকরাগুলো। দেখেই রাগ হয়েছিল, আপা বলল- তোর ভাগ্নিরা এমন করছে আমার কি দোষ! আর সামীহা বিশেষ কিছু করেনি, সাবীহা চিল্লাফাল্লা করেছে তাই একটু নাকি ছিড়েছে। আমি বকা দিয়েছি! গুছিয়ে রেখেছি টুকরাগুলো।

এই ঘটনা আমাকে নাড়িয়ে দিয়েছিল, ভেবেছিলাম বকুল ফুল লিখতে পারবো না; কারণ প্রায় দুই মাস মাথা খালি ছিল, বাক্য জোড়া দিতে পারছিলাম না, কি লিখেছিলাম এই পাতাগুলোতে তা শত চেষ্টাতেও আনতে পারিনি; পরে নতুন করেই শব্দ, বাক্য লিখতে হয়েছে- কষ্ট হয়েছে, কিন্তু লিখেছি শেষ পর্যন্ত।"

.
উপন্যাস: বকুল ফুল

লেখক: মনোয়ারুল ইসলাম
প্রকাশনাঃ নালন্দা প্রকাশনী
প্রচ্ছদঃ মোস্তাফিজ কারিগর।
মূদ্রিত মূল্যঃ ২৭৫ টাকা।

বিঃদ্রঃ আমি কারো অনুরোধে রিভিউ লিখছি না। অনেকে ভাবতে পারেন লেখকের অনুরোধে তার ভইয়ের প্রচার চালাচ্ছি।

আমি আমার পূর্বের রিভিউতেই বলে দিয়েছি, এই বইমেলায় প্রকাশিতব্য বইগুলোর মধ্যে যে বইগুলোর রিভিউ পড়ে আমি খুব, খুব আকর্ষিত হয়েছি বা যে বইগুলো কেনার ইচ্ছা আমার আছে সে বইগুলোর কিছু প্রচারণা আমি করব।

আপনাদেরকেও অনুরোধ করছি, আপনাদের ভালো লাগা বই নিয়ে রিভিউ লেখার জন্য। এতে লেখক ও পাঠক উভয়েরই উপকার হবে।

ছড়িয়ে পড়ুক বইয়ের কথা। বই হোক পৃথিবীর, পৃথিবী হোক বইয়ের।

No comments

Powered by Blogger.