Header Ads

Header ADS

অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী || আহমদ ছফা- Akter R Hossain

ছবি: সংগৃহীত 

যে কারণে বইটি পড়তে উৎসাহী হয়:

বহুদিন আগে একবার পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে বইটি দেখতে পেয়েছিলা।  'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' নামটি দেখেই খুব আকর্ষিত হয়েছিলাম।  কিন্তু পড়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বইটি পড়িনি। কারণ, ভেবেছিলাম হতে পারে নাম সুন্দর, কিন্তু গল্প ভাল মানের না। তাছাড়া এই লেখকের নামও তখন জানা ছিল না।

কিন্তু আমার স্যার একদিন পরামর্শ দেয় 'আহমদ ছফা' পড়ার জন্য। বাস্তবধর্মী লেখক। জীবনের গভীরতা উপলব্ধি করতে এবং মানুষ হতে সহায়তা করে তার লেখা।

তারপর স্যারের কাছে তার বই এর কোন সাজেস্ট না চেয়েই 'অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী' পড়া শুরু করি যেহেতু বইটির প্রতি অনেক আগেই আকর্ষণ বোধ করেছিলাম।

ছোট্ট রিভিউ: 

সোহিনী যাকে উদ্দেশ্য করে লেখাটি শুরু সেই প্রিয়তম জাহিদের কাছে অর্ধেক আনন্দ,অর্ধেক বেদনা,অর্ধেক কষ্ট,অর্ধেক সুখ,অর্ধেক নারী,অর্ধেক ঈশ্বরী

 লেখার শুরুতে একটু বিরক্ত আসতে পারে। এই বিরক্তিই এক পর্যায়ে রোমাঞ্চজনক হয়ে উঠে। রোমাঞ্চ আরম্ভ হয় যখন দুরদানার দুরন্ত গল্প শুরু হয়।

জাহিদের জিবনে তিন জন নারী জড়িয়ে পড়ে। দুরদানা হলেন প্রথমজন যিনি সব সময় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলাফেরা করেন, যিনি কখনো নারীত্ব নিয়ে ভাবে না।

দ্বিতীয়জন হলেন কন্যা শামারোখ যিনি তার অপরূপ সৌন্দর্য ও নারীময়তায় তার চারপাশকে মারাত্মক  আকর্ষিত করে রাখে। তিনি তার অপরূপ সৌন্দর্য দ্বারা পৃথিবীকেই যেন জয় করতে চায়।

তৃতীয়জন হলেন সোহিনী।জাহিদের জিবনে দুরদানা ও কন্যা শামারোখ এর অধ্যায় শেষ হলেই আসে সোহিনী। সোহিনীরর কাছেই যেন জাহিদ শেষ আশ্রয় চায়। সে সোহিনীর ভালবাসা পেতে উদগ্রীব হয়ে উঠে। কিন্তু তিনি তার আগে সোহিনীকে জানাতে চায় শামারোখ ও দুরদানা নিয়ে তার যে গল্প সেটা। সোহিনীকে উদ্দেশ্য করেই পুরো গল্পটি লেখা। তাই সম্পর্কে গল্পে কোন কিছু স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

কন্যা শামারোখের জন্যে কি করেনি জাহিদ..? তার ত্যাগ তিতিক্ষা সব ভুলে গিয়ে শামারোখ অন্য আরেকজনের হাত ধরে চলে যায়। এটা ছিল খুবই কষ্টদায়ক।

সোহিনী সম্পর্কে গল্পে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ ছিল না। হয়তো দ্বিতীয় খন্ডে লেখক সব স্পষ্ট করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, লেখক দ্বিতীয় খন্ড শেষ করতে পারেন নি।

পাঠ প্রতিক্রিয়া:

নিঃসন্দেহে গল্পটা বাস্তবতার আঙ্গিকে রচিত। মনে হচ্ছে, আহমদ ছফার নিজের কিছু ঘটনাও এতে আছে। গুডরিডস থেকে জানতে পারলাম দুরদানা হলেন শামীম সিকদার যার হাতে বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ
ভাস্কর্যই তৈরি।

উপন্যাসটি অসম্ভব ভাল লেগেছে। আহমদ ছফার দার্শনিকের মত কথাগুলো তো একেবারে হৃদয়েও বিঁধে গেছে। কথাগুলো মগজে এখনো ঘুরাফেরা করছে। নীচে কিছু উক্তি দিলাম।


১। 'জীবন শিল্প নয়,কবিতা নয়। জীবনে যা ঘটে শিল্প ও কবিতায় তা ঘটে না।জীবন জিবন ই। জীবনের সাথে অন্য কিছুর তুলনা চলে না এবং জীবন ভয়ানক নিষ্ঠ্য।। সমস্ত প্রতিশ্রুতি , সমস্ত প্রতিজ্ঞা, সমস্ত স্বপ্ন দুঃস্বপ্নের ওপারে জীবনের লীলাখেলা।'

২। 'অনেক সময় মানুষ সত্য প্রকাশের ছলে নিজের মনের প্রচ্ছন্ন ঈর্ষা প্রকাশ করে। '

৩। 'সুন্দর জিনিশের আলাদা একটা মন হরণ করার ক্ষমতা থাকে।'

৪। 'কোন বিজয়ইই নিরবচ্ছিন্ন বিজয় নয়। তার আরেকটি দিকও রয়েছে। সব বিজয়ের পেছনে একটি পরাজয় লুকিয়ে থাকে।'

৫। 'বিপ্লব সফল করতে হলে সৌন্দর্য,শক্তি, অর্থ,মেধা,কৌশল সবকিছু একযোগে কাজে লাগাতে হবে।'

৬। 'দরিদ্রের অক্ষমতাকে  কেউ যখন অবজ্ঞা করে, সেটা হাজার গুণ নিষ্ঠুর হয় বাজে।'

৭। 'কোন রূপবতীর নামের সাথে যদি হৃদয়ঘটিত অপবাদ যুক্ত হয় তখন তার সৌন্দর্য বহুগুণে বেড়ে যায়। যেন সে অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী।'

৮। 'ঢাকা শহরে কবির সংখ্যা কাকের সংখ্যার চাইতে কম নয়।'

৯। 'জিবনকে যদি অতীতমুক্ত না করি, তবে বর্তমানকে ধারণ করবো কোথায়?'

১০। 'সবকিছুকে বাদ দিয়ে মন নিয়ে টানাটানি করলে যে জিনিশটি বেরিয়ে আসে,সেটা শূন্য।'

১১। 'কুকুর মানুষ কামড়ালে সংবাদ হয় না,মানুষ যখন কুকুরকে কামড়ায় সেটাই সংবাদের বিষয়বস্তু হওয়ার গৌরব অর্জন করে।'

১২। কাদায় আটকানো হাতি যেমন ডাঙায় উঠার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে, আমিও সেরকম স্মৃতির জলাভূমি থেকে ছুটে বেরিয়ে আমার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি'

১৩। 'আমরা এক আজব সময়ে বসবাস করছি,নিজের স্বার্থের প্রশ্ন না থাকলে কেউ কারো জন্য সামান্য বাক্য ব্যয় করতেও কুণ্ঠিত হয়।'

এই বইটির শেষের কথাগুলো থেকেই আঁচ করা যায় আহমদ ছফা কতটা নির্ভীক ও সত্যবাদী লেখক। কথাগুলো কখনো ভুলবার নয়। লেখাটি হল-

'যেই দেশটিতে গিয়ে আমাদের ব্রিলিয়ান্ট তরুণেরা হোটেল বেয়ারা কিংবা ড্রাইভারের চাকরি পেলে জীবন স্বার্থক মমে করে, আমাদের অভিজাত এলাকার অত্যন্ত স্পর্শকাতর অপরূপ তরুণীরা শিশু পাহারার কাজ পেলে মনে করে আহ কি সৌভাগ্য! যেই দেশটিতে যাওয়া হয়নি বলেই সমস্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ এই নশ্বর জিবনে স্বর্গ দেখা হবে না বলে আফসোস করে, শামারোখ জমিরুদ্দিনকে নিয়ে সেই স্বপ্নের দেশ আমেরিকার কোথায় হারিয়ে গেছে, কে বলতে পারে?' 

বইটির বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন  কথাগুলোকে সাঁজালে কথাগুলো সুন্দর একটি কবিতা হয়ে উঠে। হ্যাঁ, সামহোয়্যার ইন ব্লগের তানুসা নামের একজন ব্লগার কথাগুলোকে সাজিয়ে একটা কাব্যিক রূপ দিয়েছেন যেটা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না। নীচে ঐ লেখাটি হুবহু কপি করে দেয়া হল।

'নারী,যার আঁচল জুড়ে ভালবাসা আর মায়ার পূর্ণতা পাবে,

নারীর চোখে তাকিয়ে দেখ-দেখবে সহজ সরল,

মায়া ভরা এক দীপ্ত আলো,

সে অবাধ ভাবে মায়া দিতে পারে,বাঁচতে শিখাতে পারে তোমায়, 
তোমার ভেতরের মানুষটাকে চিনাতে পারে।

সে দেবী…সে কখনোও উন্মাদ, কক্ষনোও শান্ত,

 কখনোও বধূ নামের তোমার সেই আত্মার প্রশান্তি,

নারী মানে –বহুদুর হেটে ফিরে এসে তুমি
যখন হুমড়ি খেয়ে পড়বে তার আঁচলে একটু ঘুমের জন্য

মায়া নামের অনুভুতিটা তার বুকের গন্ধে খুঁজে পাবে,

যাকে তোমরা নারী বলো-তার আরেকটা ছাঁয়ার নাম-প্রশান্তি,

শীক্ততা ,পবিত্রতা, মায়া, বন্ধন তার অলংকার,

হঠাৎ বুকের পরে সিক্ত স্পর্শের স্পর্শ সে,

কন্যার আলতা পায়ের রক্তাক্ত ভাল লাগা সে,

লক্ষ ফাগুনের কৃষ্ণচূড়ার আবিড় আলো সে,

রক্ত –মাংসে গড়া এক বস্তু ভেব না তাকে,

তার ডানায় আছে উন্মাদনা,

সাম্যবাদ এর সংগ্রামী চেতনা-তা ভুলে যেওনা,

নারী কোন বদ্ধতায় আবদ্ধ থাকবে না-

সীমা কাকে বলে তাকে বুঝাতে এসো না,

তার প্রাপ্তি, তার সাম্য-তার –ই,

নারী আজ জানে –জীবন মানে শুধু বেঁচে থাকা নয়,

নিজের আলোয় নিজের জীবনকে রাঙ্গানো মানেই জীবন…

ও হে মানব –মানবীর হাত টেনে ধরো না,

তাকে তোমরা আটকাতে পারবে না,

হৃদয়পুরে তার আজ বড্ড আশা,

সে আকাশে ,নিজ হাতে ,নিজ উল্লাসে ,
স্বাধীনতার ,নিজস্বতার আলোর প্রদীপ আঁকবে

সাদা ,সফেদ শাড়ি ,আলতা পায়ে
নিজস্বতার আল্পনা আঁকবে মাঠ জুড়ে,

ছুটতে দাও,বাচতে দাও তাকে –তার মতন
করে… 

[ভুল ত্রুটি মার্জনীয়]

No comments

Powered by Blogger.