Header Ads

Header ADS

হয়তো একটি প্রেমের উপন্যাস - আকতার আর হোসাইন



'হয়তো একটি প্রেমের উপন্যাস' নামটার মধ্যেই কেমন জানি একটা রহস্য রহস্য লাগে। আর এই রহস্য রহস্য রহস্য লাগার কারণেই বইটি কিনেছিলাম।



বইটা কিনেছিলাম, ২০১৭ এর একুশে বই মেলাতে। কিন্তু তখন আমার দরজায় এইচ এস সি পরীক্ষা কড়া নাড়ছিল বলে বইটি আর পড়া হয়নি। পরে পড়ার কথা ভুলে গেছি কিন্তু   আবার ফেসবুকে বইয়ের রিভিউটা আসলে বইটার কথা মনে পড়ে।

বই এর ফ্ল্যাপে লেখা কথাগুলো

তারপরে এক ভোরে ঘুম থেকে উঠেই এক বসাতে পড়ে ফেললাম বইটা। এক নিশ্বাসে পড়ার মতো একটা বই যদিও মাঝখানটাতে এসে একটু বিরক্তবোধ হয়েছিল।

বই এর চরিত্রগুলো লেখক খুব সুন্দর করে এনেছেন। গল্পটাকেও খুব সুন্দরভাবেই এগিয়ে নিয়েছেন। আমি ছোট্ট একটি রিভিউ লেখার চেষ্টা করছি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টে দেখবেন।
.
পুরো গল্পটা আবর্তিত হয় কবরস্থানের একটি কবরে লেখা একটি অদ্ভুতু ধরণের এপিটাফকে ঘিরে। কবরস্থান নিয়ে জিতুর দিনদিন পাগলামি বেড়েই চলছে। প্রায়ই সে এখন রিপাদের বাসার সামনে কবরস্থানে সময় কাটায়। কবরস্থানের সামনে একটা মসজিদ আছে।  জিতু এখন সেখানে নামাজও পড়ে। অথচ আগে নামাজের নামও মুখে আনতনা।

হঠাৎ নামাজি হবার কারণটা কি...? এর পেছনে কাহিনী  তো একটা আছে নিশ্চয়।  কি সেটা?

রিপা জিতুর হাত ধরে আছে। জিতু সেই হাতের উপরে অন্য হাতটা রাখল। রিপার দিকে তাকিয়ে বলল, " আমি আসলে কবরস্থানে কেন যাই, কার জন্য অপেক্ষা করি সেটা এখানে বসে বুঝানো যাবে না..

তারমানে জিতু কোন একজনের জন্য কবরস্থানে গিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে..?

কার জন্য, কিসের টানে জিতু কবরস্থানে যায়  সেটা জানার জিন্য রিপা উন্মুখ হয়ে আছে। তাকে জানতেই হবে।

সেটা জানার জন্য রিপা নিজেও কবরস্থানে যায়।

কবরের সামনে শ্বেতপাথরের একটা ফলক।  সেখানে কিছু কথা লেখা আছে। জিতু বলল, " লেখাটা পড়ার পর থেকে আমি কবরের মালিককে খুঁজছি। নিশ্চয় এই কবরের কাছে তার পরিবারের কেউ না কেউ আসে।তাই দিনের পর দিন আমি কবরের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেছি। আমি আসলে জানতে চাই লেখাটা কে লিখেছে এবং কেন লিখেছে...?"

জিতু আরো বলে,  " রিপা আমি জানতে চাই।দরকার হলে আমি প্রতিদিন কবরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকব। এই কথা যে লিখতে পারে সে অবশ্যই কবরের সামনে আসবে।  আমি তার সাথে দেখা করতে চাই।"
এপিটাফের লেখাটা পড়ার রিপাও বিস্মিত হয়। তার মাথায় লাইনগুলো ঘুরতে থাকে। এমন একটা লেখা কেউ এপিটাফে লিখতে পারে? যে লিখেছে তার এখন কি অবস্থা? এক মাস আগে তার মানসিক অবস্থা যেমন ছিল এখনো কি তেমনই আছে?

এক পর্যায়ে জিতু ও রিপা কবরের মালিক সামিয়াকে খুঁজে বের করে। কবরটা ছিল সামিয়া স্বামী ইকবালের। সামিয়ার জবানেই পুরো গল্পটা শেষ হয়। সে জিতু ও রিপাকে ইকবালের সাথে তার প্রেম, প্রণয় ও ইকবালের ওপারে চলে যাবার গল্পটা শোনায়। ইকবাল দুশ্চরিত্রের ভালো লোক। গল্পের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত শোভন। ইকবালের বন্ধু। সে ইকবালের প্রতিটা কাজেই যেন কিভাবে কিভাবে জড়িয়ে যায়।

বইটি নিয়ে একজন পাঠক ফেসবুকে সুন্দর পোস্ট দিয়েছিলেন।   পোস্টটা কিছুটা এরকম ছিল-
'রিপা ও জিতুকে সামিয়া কাছে ইকবালের মৃত্যুর গল্প জানতে গিয়ে তারা জেনেছিল ইকবালের বেঁচে থাকার গল্প। সামিয়ার হৃদয়ে ইকবালের বেঁচে থাকার গল্প।

এপিটাফে কি এমন অদ্ভুত লেখা ছিল, আর এটি লিখার পেছনের গল্পটাই বা কি ছিল?

জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে মারুফ রহমানের এই বইটি।
.
পাঠ প্রতিক্রিয়া:

হয়তো একটি প্রেমের উপন্যাস'-র গল্পটা আসলেই সুন্দর। গল্পের চরিত্রগুলোকে নায়ক মনে হবে না। আবার কাহিনীর একটু গভীরে গেলেই বুঝা যায় চরিত্রগুলো খলনায়কেরও না।

তাহলে কি..?

মানে হল জোর করে লেখক চরিত্রের উপরে কাহিনী সৃষ্টি করেন নি। যতটা পেরেছেন বাস্তবতার সাথে মিল রাখার চেষ্টা করেছেন।

যেকোন গল্প পড়লে গল্পের নায়কের চরিত্রটির সাথে নিজেকে মিলিয়ে নেয়ার একটা চেষ্টা থাকে। প্রথমে যার সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিই একটু পর গিয়ে দেখি সে নায়ক না। আবার যখন নায়কের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিই তখন দেখি কি সেতো খলনায়ক। বাস্তবতার সাথে মিল।পাওয়া যায় এমন গল্প পড়লে যা হয় তাই আর কি।

বই এর মাঝখাটাতে, এসে আমি প্রথম ধাক্কা খায়। কিছুটা অশ্লীল স্টোরি পেয়ে আমি একেবারেই হতাশ হয়। ইচ্ছে হয়েছিল বইটা রেখে দিতে।

কিন্তু  বিরক্তবোধ থাকার পরেও জোর করে সামনে এগোলাম।

না, সামনে এগিয়ে হতাশ হয়নি। বরং মনে হয়েছে কাহিনীগুলো তো এরকমই হওয়া উচিৎ ছিল।।

সব মিলিয়ে বইটা খুবি ভালো লেগেছে আমার কাছে।  তবে গল্পের শেষ অংশটা আরেকটু বড় করে আরেকটু সুন্দরভাবে রহস্যের জটটা ক্লিয়ার করা যেতো।

যাইহোক,  লেখার শেষ অংশে যখন এপিটাফ লেখার পেছনের স্টোরিটা শেষ হয় তখন চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি চলে আসে আমার।

এই রকম একটি সুন্দর উপন্যাস লিখার জন্য Maruf Rehman ভাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বই রিভিউ: হয়তো একটি প্রেমের উপন্যাস
লেখক: মারুফ রেহমান
ধরণ: সমকালীন উপন্যাস 
প্রথম প্রকাশ: একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬
প্রকাশন: বর্ষাদুপুর প্রকাশনী
প্রচ্ছদ: শিবু কুমার শীল
মুদ্রিত মূল্য : ২৭০ টাকা
.
ফেসবুকে আমি

No comments

Powered by Blogger.